স্বদেশ ডেস্ক:
গ্রামে আগুনের সূচনা হয় ২৯ মার্চ শবে বরাতের রাতে। সেদিন আগুনের নিয়ন্ত্রণ আসলেও পরদিন ৩০ মার্চ আগুনে তিন পরিবারের ঘরসহ আসবাবপত্র পুড়ে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পরে গ্রামের মানুষ।
আগুনে পুড়ে যাওয়ার ভয়ে দুই সন্তানকে বাবার বাসায় রেখে এসেছেন আমেনা বেগম। তার মতো আগুন আতঙ্কে দিন কাটছে আলম, মোতালেব, মকসেদ আলীসহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের সাবাজপুর গ্রামের মানুষ।
গ্রামের ভুক্তভোগীরা বলছেন, অলৌকিকভাবে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার আগুন ধরছে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে। কখনো রান্নাঘরে, কখনো বা কাপড়ের ভিতর, কখনো ঘরের চালে।
গত কয়েকদিনে ২০টি বাড়ীতে প্রায় শতাধিকবার আগুন লেগেছে। নিজেদের উদ্যোগে আগুন নেভানোর জন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈদ্যূতিক পাম্প স্থাপন করেছেন গ্রামের মানুষ।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, আমরা এখন বিশ্বাস করে নিয়েছি এটা অলৌকিক আগুন। ভুক্তভোগী মোতালেব হোসেন জানান, গ্রামে কয়েকজন তান্ত্রিক নিয়ে এসেছিলাম। তাদের মতে পরিবারগুলোর উপর কালাজাদু করা হয়েছে। তারা চেষ্টা করেছে কিন্তু আগুন ধরা বন্ধ করতে পারেনি।
উপজেলায় ফায়ার ষ্টেশন সূত্রে জানা যায়, অসতর্কতার কারনে আগুন লেগেছে। আমরা ওই পরিবারগুলোকে ১ মাস মনিটরিং করতে পরামর্শ দিয়েছি। সঠিকভাবে মনিটরিং করলে আগুনের সূত্রপাত খুজে পাওয়া যাবে। অলৌকিক কোন ঘটনায় আমরা বিশ্বাস করি না।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কম্বল ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন জানান, পরিবারগুলো অলৌকিক আগুন দাবি করলেও বিষয়টি আমরা ভিন্নভাবে দেখছি। ধারণা করছি একটি চক্র ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টায় আছে। জড়িতদের পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে, লিচু গাছে আম ধরা ঘটনার পরে অলৌকিক আগুন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
সরজমিন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আগুন লাগার ঘটনা স্বচক্ষে দেখে সংবাদকর্মী জিয়াউর বকুল। ২৪ এপ্রিল তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, হয়তো আপনারও অবাক হবেন। ঠাকুরগাঁওয়ে অলৌকিক আগুন আতঙ্কে দিন কাটছে গ্রামবাসির। রিপোর্ট করতে গিয়ে মুহুর্তেই আগুন লাগার ঘটনা স্বচক্ষে দেখে অবাক হয়েছি। পরিবার গুলোর পাশে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
মাঝাহারুল ইসলাম বাদল বলেন, জিনের দ্বারা লাগানি করে দিয়েছে। এ রকম ঘটনা আমাদের গ্রামে হয়েছিল। সেটা ছিল জিনের আগুন নিয়ে খেলা। পরে অনেক মাহাত, মুন্সি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে (যেমন বাটি চালান, পাথর চালান, দোয়া তাবিজ) বন্ধ করা হয়েছে। অদ্যাবধি আর কোন সমস্যা হয়নি।
আব্দুল হাকিম লিটু তার ফেসবুকে লিখেছেন, আমি স্বচক্ষে আগুন লাগতে দেখেছি। একদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ আসলে অপরদিকে আবার আগুন লেগে যায়। ২৯ মার্চ থেকে খুব ভয়াবহ অবস্থায় আছে সেই এলাকার মানুষ। আল্লাহ হেফাজত করুক।
ফেসবুকে সোয়েল মাহমুদ লিখেছেন ঘটনাটি আমার রিলেটিভ এর বাসায়, সত্যতা যাচাই প্রয়োজন, সত্যতা যাচাই হলে কিছু ভণ্ড থেকে অন্তত সবাই রক্ষা পাই।
ঠাকুরগাঁওকে যে যেভাবে পারছে পচাচ্ছে। কিছুদিন আগে দেখলাম লিচু গাছে আম। তারপর শুনলাম সেটা আঠা দিয়ে লাগানো। এখন আগুন কিছুদিন পর দেখা যাবে মানুষেরই কামড়ানি, আক্ষেপ নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন রবিউল ইসলাম।